জীবন নিয়ে ভাবনা ও মৃত্যুর ভয় নেই

প্রকাশঃ এপ্রিল ১১, ২০১৫ সময়ঃ ২:৪১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ

hasan-2হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক। ছোটগল্পের যুবরাজ হিসেবেও তিনি খ্যাত। লিখে চলেছেন ছয় দশক ধরে। কেবল গল্প লিখেও যে লেখক হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করা যায় এবং সাহিত্যে স্থায়ী আসন নেওয়া যায়, তিনি তাঁর উজ্জ্বল উদাহরণ।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—আত্মজা ও একটি করবী গাছ, নামহীন গোত্রহীন, পাতালে হাসপাতালে, জীবন ঘষে আগুন, আগুন পাখি, সাবিত্রী উপাখ্যান প্রভৃতি। লেখালেখির জন্য রাষ্ট্রীয় বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।

তাঁর জীবন-ভাবনা, জীবন-অভিজ্ঞতা, লেখালেখি ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে। লেখালেখিতে যেমন পাওয়া যায় একজন কুশলী গদ্যকার ও নির্মোহ বর্ণনাশৈলীর হাসান আজিজুল হককে, তেমনি তাঁর অসংখ্য সাহিত্যভাষণ ও সাক্ষাৎকারেও দেখা মেলে একজন তুখোড় আড্ডাবাজ ও হাস্যরসিক হাসান আজিজুল হকের। সম্প্রতি তিনি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। প্রতিক্ষণ পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হল।

প্রশ্ন: আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই যে বয়স বেড়ে যাচ্ছে, মৃত্যুচিন্তা আপনাকে ভাবায় না?

হাসান আজিজুল হক: আমি আগেও বলেছি, জীবন নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। তেমনি মৃত্যু নিয়েও আমার কোনো ভয় নেই। সময়ের কারণে দেহে হয়তো বার্ধক্য এসে যায়। এটা তো ন্যাচারাল। এটাকে অস্বীকার করব কী করে? তবে দৈহিক বার্ধক্য এলেও আমি মনে করি যে বৃদ্ধ হয়ে যাইনি! যদি তাই হয়, তবে কি তুমি রবীন্দ্রনাথকে বুড়ো রবীন্দ্রনাথ বা বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ বলবে? রবীন্দ্রনাথ তো এখন পর্যন্ত বলা চলে যে আমার চেয়ে বেশি বয়স পেয়েছেন। আমাদের দেহ নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে এতটা বছর পেরিয়ে এসেছে, কষ্ট সয়েছে, তাই তার একটি সময় বিশ্রামের প্রয়োজন হবেই। তখনই দেখা দেয় বার্ধক্য। তাই বার্ধক্য দোষের কিছু নয়। আর মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই। মৃত্যু নিয়ে আমাকে আলাদা করে ভাবতেও হয় না। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য মৃত্যুকে শ্যামসম বলে আখ্যা দিয়েছেন। আমার কাছে মৃত্যু তেমনটিও নয়। আসলে আমি মৃত্যু নিয়ে মোটেও ভাবি না।

প্রশ্ন: এবার আমরা ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। এখন কী পড়ছেন বা কোন কাজে সময় বেশি দিচ্ছেন?

হক: আমি সব সময়ই নতুন নতুন বিষয়ের ওপরে বই পড়তে পছন্দ করি। পছন্দটা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। নতুন বই না পেলে ভালো লাগে না। এ মুহূর্তে পড়ছি যে বইটি, সেটি একজন জাপানি লেখকের। বইটি আমার ছেলে এনেছে জাপান থেকে। বইটির কাহিনি গড়ে উঠেছে হিটলারের ইহুদি নিধন, নাৎসিদের অত্যাচার—এসব ঘটনা নিয়ে। আরেকটি মজার কাজ করছি এখন, সেটি হলো রক্তপাতহীন শুটিং করছি!

রক্তপাতহীন শুটিং মানে?

হক: (অট্টহাসি হাসলেন হাসান আজিজুল হক) একদল লোক এসেছে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে। অনেক আগে আমি ‘মফস্বল মহানগর’ বিষয়ে লিখেছিলাম। তারা আমার সেই লেখাকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও ছবি বানাতে চায়। সে অনুযায়ী শুটিং চলছে। আমাদের বাংলাদেশের কিন্তু একটি বিশাল এলাকা মফস্বল। আর তার বাইরে মহানগর ঢাকা। এসব নিয়েই লেখাটি। এখন তারা তা নিয়েই একটি ভিডিও ফরম্যাটে কাজ করে যাচ্ছে। আমাকেও ক্যামেরার সামনে বসতে হবে। কথা বলতে হবে। এখনকার ব্যস্ততা তা নিয়েই।

প্রশ্ন: এবার আমরা আপনার লেখালেখি প্রসঙ্গে কথা বলব…

হক: এসব নিয়ে আর কী বলব বলো! অনেক তো বলেছি। এখন বরং না লেখা নিয়ে বলা যায়। (আবারও হাসলেন তিনি)

প্রশ্ন: আচ্ছা, তবে আমরা সেসব বিষয় নিয়েই কথা শুরু করি। অনেক দিন আপনি গল্প লিখছেন না। কিন্তু রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ কিংবা বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এটা কেন হচ্ছে?

হক: আমার মনে হয়, আমাদের সমাজে এখন একধরনের চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। নানা ধরনের সংকট দেখা যাচ্ছে। তাই নানা বিষয়ে কথা বলতে হচ্ছে। লিখতে হচ্ছে। এগুলো নিজের ভেতরকার তাগিদেই লিখতে বা বলতে হচ্ছে। তার ফলে এ জাতীয় লেখাগুলো এখন তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া দীর্ঘকাল তো ছোটগল্পই লিখেছি। আরেকটি বিষয়, লেখক হিসেবে আমি যা করছি, সেটি জাবর কাটার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হচ্ছে। জাবর না কেটে নতুন কিছু দিতে পারছি কি না, সেটাও একটি বিষয়। যাতে আমার লেখাগুলোকে জাবর কাটা না বলা যায়, তাই লেখা থেকে বিরত থাকছি। অন্যভাবে বলতে পারি, একটি নতুন রাস্তা খুঁজছি আমি। এখন গত কয়েক বছর স্মৃতিকাহন লেখায় বেশ টান অনুভব করছি। তাই এখন লিখে চলেছি একের পর এক স্মৃতিকাহন।

প্রশ্ন :আপনার দীর্ঘ ছয় দশকের লেখালেখির জীবনে উপন্যাস লিখেছেন কেবল দুটি—আগুন পাখি ও সাবিত্রী উপাখ্যান। গল্প নিয়েই কাটিয়ে দিলেন অনেকটা সময়। কেন?

হক: উপন্যাস আমি লিখতে চেয়েছি শুরু থেকেই। কিন্তু পারিনি বলেই গল্প লিখেছি। তবে একেবারেই যে চেষ্টা করিনি, তা নয়। ‘তরলা বালা এক বঙ্গ রমণীর কথা’ নামে একটি লেখা শুরু করেছিলাম। লিখেও ছিলাম অনেকটা। তার পরে আর আগ্রহ বোধ করিনি। তাই লিখে শেষ করা হয়নি।

প্রশ্ন :জন্মদিনের আগমুহূর্তে আপনি আমাকে এতটা সময় দিয়েছেন, সে জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার সুন্দর ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আবারও জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

হক: তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ। তুমিও ভালো থেকো।

প্রতিক্ষণ/এডি/এআই

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G